ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। দুই উপজেলার অন্তত ১৫টি স্থানে নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। সৃষ্টি হয়েছে খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। দুর্গতদের অভিযোগ, বাঁধ ভাঙার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখনো তারা পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা পাননি।
উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মুহুরী, সিলোনিয়া ও কহুয়া নদীর পানি বেড়ে বাঁধে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। মুহুরী নদীর পরশুরাম অংশের জঙ্গলঘোনা (২টি), অলকা (৩টি), শালধর (১টি) এবং ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় (১টি) ভাঙন হয়েছে। সিলোনিয়া নদীর গদানগর (পরশুরাম) ও দেড়পড়া (ফুলগাজী) এলাকায় তিনটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙেছে। এছাড়া কহুয়া নদীর সাতকুচিয়া, বেড়াবাড়িয়া (পরশুরাম) ও দৌলতপুর (ফুলগাজী) এলাকাতেও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি না হয়ে বরং নতুন নতুন ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি পানির নিচে চলে গেছে। এছাড়াও ফুলগাজী পরশুরাম সড়কে বন্ধ হয়ে পড়েছে যান চলাচল। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এসব এলাকায় প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে পড়ে।
দুর্গত এলাকাগুলোর বাসিন্দারা বলছেন, বারবার প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সতর্ক করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ফুলগাজীর গাইনবাড়ি এলাকার রেহানা আক্তার বলেন, রাত থেকেই ঘরে পানি ঢুকছে। কিছু জিনিসপত্র ওপরে তুলে রাখলেও খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পরিবার নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। এখনও প্রশাসনের কাউকে এলাকায় দেখিনি। গেল বছরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠার আগেই আবারও এই দুর্ভোগে পড়লাম।
উত্তর শ্রীপুরের নাপিতকোনা এলাকার আব্দুর রহিম জানান, বাঁধ রক্ষায় স্থানীয়রা অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি। এখন আশ্রয় নিয়েছি পাশের একটি বাড়িতে। কিন্তু খাবার ও পানির জন্য চরম কষ্ট হচ্ছে। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না। আমরা বারবার এমন দুর্ভোগে পড়তে চাই না, চাই টেকসই বাঁধ।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহরিয়া ইসলাম বলেন, কয়েকটি দুর্গত এলাকায় শুকনো খাবার, স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানকারীদের জন্য রান্না করা খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।তবে পরশুরামের ইউএনও আরিফুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, জেলায় গত তিন দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। বুধবার দুপুর ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাতের মাত্রা কিছুটা কমেছে। আগামীকালও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানে বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে। তবে বর্তমানে ভাঙন এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশ করায় আরও এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় ৪০০ করে মোট ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া রান্না করা খাবার সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জেলায় ত্রাণ কার্যক্রম খাতে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
Leave a Reply