 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ দপ্তরকে (পূর্বের পেন্টাগন) পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়া থেকেই এমন নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার এই নির্দেশ আকস্মিক হলেও অনভিপ্রেত নয়। কারণ গত দুই সপ্তাহ ধরে রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। বুধবার দেশটি পরমাণু ড্রোনের পরীক্ষা চালিয়েছে। পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা হলেও এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা শংকা প্রকাশ করেছেন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধাবস্থা দেখা যাচ্ছে।
গত ৩৩ বছরে এটাই হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের শেষ পারমাণবিক পরীক্ষা হয়েছিল ১৯৯২ সালে, যারপর দেশটি ভবিষ্যতে পরীক্ষার ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা মোরাটোরিয়াম ঘোষণা করেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা
চালাতে নির্দেশ দেন। গত সপ্তাহেই রাশিয়া পরমাণু অস্ত্রবহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে। তারপরে পরমাণু শক্তিচালিত টর্পেডো ‘পোসাইডন’ও পরীক্ষায় সফল হয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো। এ অবস্থায় মার্কিন পরমাণু অস্ত্রকেও সমানে পরীক্ষা করতে চাইছেন ট্রাম্প।
গতকাল সকালে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বৈঠক শুরুর কিছুক্ষণ আগেই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশের কথা জানান ট্রাম্প। সেখানে রাশিয়ার পাশাপাশি চীনের প্রসঙ্গও উল্লেখ আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পোস্টে লেখেন, আমেরিকার কাছে অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার প্রথম মেয়াদেই মজুত অস্ত্রের নবীকরণ এবং তার সংস্কারের মাধ্যমে এই সাফল্য এসেছে।
ট্রাম্পের দাবি, পরমাণু অস্ত্রের মারাত্মক ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে তিনি এগুলোকে ঘৃণা করতেন। কিন্তু তার কাছে কোনো বিকল্প ছিল না বলেই দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের। এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। ট্রাম্প জানান, বর্তমানে পরমাণু অস্ত্রের শক্তির দিক থেকে আমেরিকার পরই দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া এবং তৃতীয় স্থানে চীন। তবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে রাশিয়া এবং চীন দুই দেশই পরমাণু অস্ত্রের নিরিখে আমেরিকার সমানে সমানে পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ট্রাম্প।
ধারণা করা হচ্ছে, পরমাণু শক্তি নিয়ে রাশিয়ার সাম্প্রতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কারণেই আমেরিকার যুদ্ধ দপ্তরকে এই নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। যদিও পোস্টে সরাসরি তেমন কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লিখেছেন, অন্য দেশগুলোর পরীক্ষামূলক কর্মকাণ্ডের কারণেই তিনি যুদ্ধ দপ্তরকে পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু হবে বলেও দাবি ট্রাম্পের।
ইতিমধ্যেই পরমাণু শক্তিচালিত ড্রোন ‘পোসাইডন’-এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন খবরটি প্রকাশ্যে আনেন। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই সুপার টর্পেডো পরমাণু অস্ত্র বহন করতে পারে এবং তা ব্যবহার করলে উপকূলবর্তী এলাকায় বিপর্যয় নামতে পারে। সমুদ্রের তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে।
এখানেই শেষ নয়। এক সপ্তাহ আগে আরো একটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে রাশিয়া। এর নাম ‘বুরেভেস্টনিক’। এটি ১৪ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে বলে জানায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বিভাগ। ক্রেমলিনের দাবি, ৯এম৭৩০ বুরেভেস্টনিক (স্টর্ম পেট্রল) ক্ষেপণাস্ত্র বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ক্ষেপণাস্ত্ররোধী বর্মকে ভেদ করতে পারবে। পুতিন জানিয়েছেন, আরো উন্নত সারমাট ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণের কাজও দ্রুত শুরু করা হবে। ‘বুরেভেস্টনিক’-এর পরীক্ষার পর রাশিয়ার সমালোচনায় মুখর হন ট্রাম্প। তিনি জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর কোনো চেষ্টাই নেই মস্কোর। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার একের পর এক পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জেরে কিছুটা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ট্রাম্প। তাই পালটা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তিনিও।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন এই তিন দেশই কম্প্রিহেনসিভ ব্যান ট্রিটিতে (সিটিবিটি) স্বাক্ষরকারী। যদিও কেউই এখনো চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করেনি। ১৯৯৬ সালে এই চুক্তি পর কেবল তিনটি দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে। উত্তর কোরিয়া ২০০৬ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। -সিএনএন, বিবিসি ও রয়টার্স
 
													